• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

শরীয়তপুরে অধিকাংশ ইটভাটা অবৈধ, প্রশাসন নীরব

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০২২

মোঃ আবুল হোসেন সরদার,শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরে অধিকাংশ ইট ভাটাই অবৈধ । শরীয়তপুর জেলার ৫৯টি ইটভাটা রয়েছে।পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে হাতেগোনা ৭টি প্রতিষ্ঠানের। বাকী গুলোর নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকার কারণে জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। ভাটা মালিকদের দাবি, সরকারের নীতিমালা মেনে ভাটা স্থাপনে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। এ ছাড়া ইটের সাইজ ছোট করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে ইটের ভাটা মালিকরা। গড়ে প্রতিহাজারে ক্রেতারা ঠকছেন ২৮৪ টি ইট। কিন্তু কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ এসব অবৈধ ইটভাটা থেকে শতভাগ রাজস্ব আদায় করছেন। কিন্তু কোনো অনুমোদন পাচ্ছেন না বছরের পর বছর। চলতি বছর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার নামে এবার প্রতি হাজার ইটের দাম বাড়ানো হয়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। সরকারি ভাবে বিভিন্ন দিবস পালনের ব্যয় মেটাতে এসব ভাটা মালিক তাদের সমিতির মাধ্যমে ভূমিকা পালন করেন বলে ভাটা মালিকদের দাবি। অবৈধ হলেও ভাটাগুলো থেকে প্রতি বছর সরকারী ভাবে আদায় করা হচ্ছে রাজস্ব। এ সকল অনিয়মের থাকার পরও শরীয়তপুরের প্রশাসন নীরব ভুমিকা পালন করছেন।এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে শরীয়তপুর সদর, জাজিরা, গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা এবং নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, শরীয়তপুরের ক্রেতারা প্রতি হাজার ইটে কমপক্ষে ২শ ৮৪টি ইট কম পাচ্ছেন। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার ৬টি উপজেলায় ৫৯টি ইটের ভাটা রয়েছে। তার মধ্যে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় ২১টি, জাজিরা উপজেলায় ১২টি, নড়িয়া উপজেলায় ৯টি, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ৬টি, ডামুড্যা উপজেলায় ৩টি এবং গোসাইরহাট উপজেলায় ৮ টি ইটের ভাটা রয়েছে।এ সকল ইটের ভাটার ইট আকারে অনেক ছোট। প্রত্যেকটি ইটের ভাটায় প্রস্তুত ইটের সাইজ রয়েছে দৈর্ঘ্য ২২ সেন্টিমিটার, প্রস্ত ৯ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতায় ৫ সেন্টিমিটার। সরকারী বিধি মোতাবেক প্রতিটি ইটের সাইজ হবে দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতায় ৭ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ইটে সকল সাইটে কমপক্ষে ২ সেন্টিমিটার কম রয়েছে। ইটের আকার ছোট হওয়ার কারণে একজন ক্রেতা প্রতি হাজার ইটে ২শ ৮৪টি ইট কম পাচ্ছেন। শরীয়তপুরের ইট ভাটা মালিকরা বছরের পর বছর ধরে এ ভাবে ইটের আকার ছোট দিয়ে ক্রেতাদেরকে ঠকিয়ে আসছেন। এদিকে ক্রেতাদের নিয়ম মাফিক ইট পাওয়ার ক্ষেত্রে ইট ভাটায় যাদের তদারকি করার কথা সেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ বিষয়ে নির্বিকার রয়েছে ।
সরে জমিন ঘুরে আরো জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সই, ভ্যাট, আইটি সনদ দিয়ে ভাটা গুলোতে ইট তৈরি ও বিক্রি করছেন। আবার এসব ইটভাটার ৯০ শতাংশ নির্মিত হয়েছে আবাদি জমি ও ফসলি জমি এবং জনবসতিপূর্ন এলাকায়। এসব ইটভাটায় বছরে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রায় ১৫ কোটি ঘনফুট মাটি। যার বেশিরভাগই কৃষি জমি থেকে সংগৃহীত এবং ফসলি জমির উপরাংশের পলি মাটি। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে অপরদিকে জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। মাটি নেওয়া জমিগুলোতে চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন টিনের চিমটি বন্ধ করতে পারলেও ইটের সাইজের বিষয়টি ও আবাদি জমির ওপরের অংশের মাটি ব্যবহার বন্ধ করতে পারছেন না।
ডামুড্যা এলাকার নাদিম মিয়া, গোসাইরহাটের জলিল শেখ, সদর উপজেলা আলী আজগর সহ একাধিক ইটের ক্রেতা বলেন , যেখানে ইটের সঠিক মাপ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। পাশাপিাশ প্রতি হাজার ইটের দাম প্রায় ১৩/১৪ হাজার টাকা। টাকা এবং সাইজে আমরা উভয় দিকেই ঠকছি।
কে কে ব্রিকস ও হাটুরিয়া ব্রিকস ফিল্ড সহ একাধিক মালিক বলেন, সরকারের নীতিমালা মেনে ভাটা স্থাপনে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো অনুমোদন পাচ্ছেন না বছরের পর বছর। চলতি বছর কয়লা, মাটিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারনে এবার ইটের দাম প্রতি হাজারে বাড়ানো হয়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল জলিল খান বলেন, আগে ইট বানানোর ফর্মা যে সাইজের ছিলো এখন তার চাইতে একটু বড় ফর্মা দিয়ে ইট বানানো হচ্ছে। যাতে ইট পোড়ানোর পর ছোট হয়ে না যায়। এবার ইট সরকারী সাইজ মতোই বানানো হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজী কে একাধিকবার তার ০১৩১৮৩৯৬৯৪৪ নম্বরে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) অভিজিৎ সুত্র ধর বলেন, সকল ভাটায় আমরা ইতোমধ্যে পরিবেশ বান্ধব জিকঝাক চুল্লি স্থাপন করতে পেরেছি। সাইজের বিষয়টি নিয়ে আমরা অভিযান চালাবো।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads